নূর-এ-সালাম রুবেল
গত ৯ থেকে ১০ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে অনুষ্ঠিত হয় আঠারো তম জি২০ সম্মেলন। অর্থনৈতিক এ সম্মেলনের এবারের মূল প্রতিপাদ্য ছিল “এক বিশ্ব, এক পরিবার, এক ভবিষ্যৎ” । এই সম্মেলনে জি২০ এর আনুষ্ঠানিক সদস্য না হয়েও দক্ষিন এশিয়ার একমাত্র অতিথি দেশ হিসেবে অংশগ্রহন করে বাংলাদেশ এক বিরল দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করেছে। এমন মর্যাদাপূর্ন অনুষ্ঠানে নিমন্ত্রিত হয়ে অংশগ্রহন করতে পারা বাংলাদেশের জন্য ছিল একটি গুরুত্বপূর্ণ মাইলফলক। যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক উন্নয়নে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের আস্থা ও সমর্থনকে প্রতিফলিত করে।
এবারের জি২০ সম্মেলনের মূল আলোচ্য বিষয় ছিল “টেকসই উন্নয়ন”। এছাড়াও এই সম্মেলনে শীর্ষ ২০ দেশের অর্থনৈতিক দেশের নেতাগন একত্রিত হয়ে বিশ্বব্যপী বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে আলোচনা করেন, যার মধ্যে অন্তর্ভূক্ত জলবায়ু পরিবর্তন এবং পরিবেশ সুরক্ষা, খাদ্য নিরাপত্তা ও কৃষি উন্নয়ন, অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার ও প্রবৃদ্ধি, শান্তি ও নিরাপত্তা, দারিদ্র্য দূরীকরন ও বৈষম্যসহ বেশ কয়েকটি গুরুত্বপুর্ন বিষয় প্রাধান্য পায়।
এবারের জি-টোয়েন্টি সম্মেলনটি বাংলাদেশের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এই সম্মেলনের প্রভাব ইতিবাচক হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। জি-টোয়েন্টি জোটে থাকা দেশগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের বিনিয়োগ ও বানিজ্যিক সম্পর্ক রয়েছে। এই সম্মেলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ তার অর্থনৈতিক অর্জনগুলি প্রদর্শন করার পাশাপাশি উন্নয়ন পরিকল্পনার জন্য অন্যান্য G20 দেশগুলির সাথে পারস্পারিক প্রতিক্রিয়া বিনিময় করার সুযোগ পেয়েছে যা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও বানিজ্যিক সম্পর্ক আরো জোরদার করতে সহায়ক হবে। বাংলাদেশ সাম্প্রতিক বছরগুলিতে উল্লেখযোগ্যভাবে অগ্রগতি করেছে, যেমন-শক্তিশালী জিডিপি প্রবৃদ্ধি এবং দারিদ্র্যের হার হ্রাস পেয়েছে, বৈষম্য, জলবায়ু পরিবর্তন এবং অপর্যাপ্ত অবকাঠামোর মতো বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলা করে চলেছে। এবং এছাড়াও, বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে এসডিজি অর্জনে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং জি-২০ শীর্ষ সম্মেলন বাংলাদেশকে তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে এবং অন্যান্য দেশ থেকে শেখার জন্য একটি প্ল্যাটফর্ম প্রদান করেছে।
মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবারের সম্মেলনে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সাথে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে অংশগ্রহন করেন যেখানে দুইদেশের রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযগিতার পাশাপাশি আঞ্চলিক শান্তি ও স্থিতিশীলতার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে। এছাড়াও ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিজ্ঞপ্তি থেকে জানা যায় , এ বৈঠকে রাজনৈতিক ও নিরাপত্তা সহযোগিতা, সীমান্ত ব্যবস্থাপনা, বাণিজ্য ও সংযুক্তি, বিদ্যুৎ ও জ্বালানী, পানিসম্পদ , উন্নয়ন সহযোগীতা এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়সহ সামগ্রিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করা হয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সংবাদ সম্মেলন থেকে জানা যায়, দুই দেশের মধ্যে পারস্পারিক আর্থিক লেনদেনের পথ সুগম করা, কৃষি গবেষণা ও প্রশিক্ষন এবং সাংস্কৃতিক বিনিময়ের বিষয়ে তিনটি সমঝোতা স্মারক সই হয়েছে। ধারনা করা যাচ্ছে এতে দুই দেশের মধ্যাকার অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক আরো দৃঢ় হবে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ন প্রভাব ফেলবে।
সামগ্রিকভাবে, জি-টোয়েন্টি সম্মেলনের মত গুরুত্বপূর্ন অর্থনৈতিক সম্মেলনে বাংলাদেশের অংশগ্রহন ছিল অত্যন্ত সম্মানজনক একটি ঘটনা। এবং দেশের অর্থনৈতিক সম্ভাবনা বিশ্ব দরবারে তুলে ধরার একটি সুবর্ণ সুযোগ। আশা করা যায় এই গুরুত্বপূর্ন অর্থনৈতিক সম্মেলনের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হবে, এই সম্মেলনের ফলে বিশ্বব্যাপী অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি বৃদ্ধি পেতে পারে, যা বাংলাদেশের রপ্তানি ও বিনিয়োগ বাড়াতে সহায়ক হবে, সম্মেলনে বাংলাদেশসহ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য অর্থনৈতিক সহায়তা বৃদ্ধির ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। এতে বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তন, রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধান ইত্যাদি ক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সহায়তা পেতে পারে, এছাড়াও এসডিজি উন্নয়নে বৈশ্বিক সম্প্রদায়ের সহযোগীতা পাবে।
সর্বোপরি, এ সম্মেলনে বাংলাদেশ একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। এতে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ভাবমূর্তি উন্নতি করার পাশাপাশি ভারত, চীন, জাপান, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ন দেশের সঙ্গে দ্বীপাক্ষিক সম্পর্কের উন্নতি করতে সক্ষম হয়েছে।
বাংলাদেশ সরকারের উচিত জি-টোয়েন্টি সম্মেলন থেকে প্রাপ্ত সুযোগ কাজে লাগিয়ে দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক স্বার্থকে আরোও এগিয়ে নেওয়া। সকল বাংলাদেশি, বিশেষ করে দুর্বল ও দরিদ্ররা যাতে এই শীর্ষ সম্মেলনের সুবিধা পায় সে বিষয়েও সরকারের প্রচেষ্টা বৃদ্ধি করা উচিত। আমরা দেখতে চাই যে, G20 দেশগুলোর সঙ্গে সহযোগিতার মাধ্যমে বাংলাদেশ ২০৩০ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের দেশ হওয়ার লক্ষ্য অর্জন করবে।
লেখক:
নূর-এ-সালাম রুবেল
ছাত্র, এমবিএ ( একাউন্টিং এন্ড ইনফরমেশন সিস্টেম বিভাগ)
জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়